|| সারাবেলা প্রতিনিধি, মাদারীপুর ||
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত স্থানে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই যাচাই বাছাই না করে স্থাপনা ও গাছপালা উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় স্থানীয়রা প্রতিকার চেয়ে বুধবার দুপুরে শিবচরের বড় কেশবপুর এলাকায় মানববন্ধন করেছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ তাদের পুরো ক্ষতিপুরণ দেয়া হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর ও কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ৭০ একর জমি নিয়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। স্থানীয়দের দাবী, প্রথমে ৪ ধারা নোটিশ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থদের কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ ও নোটিশ না দিয়েই গত ১৮ই জানুয়ারি এক সপ্তাহের মধ্যে স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে।
এদিকে এক শ্রেণীর দালালরা নতুন নতুন ঘরবাড়ি ও গাছ লাগিয়ে অতিরিক্ত বিল তুলে নেয়ার পাঁয়তারা করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে দালালদের কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরাও রয়েছে চরম দুশ্চিন্তায়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, ওসি মো. মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাহিনীর সদস্য প্রকল্প এলাকায় অভিযান শুরু করে। এ পর্যন্ত শতাধিক ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। যাচাই বাছাই না করেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দা আনিস মোল্লা বড় কেশবপুর এলাকায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আম বাগান করেছেন। বাগানে আনুমানিক ১৪/১৫শ আম গাছ রয়েছে। কয়েক বছর ধরে এই আম বাগানের আম বিক্রি করেই চলছিল তার সংসার। হঠাৎ করে উচ্ছেদের কথা শুনে তার মাথায় হাত পড়েছে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা নাদের ঢালী। কয়েক বছর আগে পদ্মা সেতুর বেড়ি বাঁধের কারণে ঘরবাড়ি হারান। এরপর এসে বসতি স্থাপন করেন কেশবপুর এলাকায় নিজ জমিতে। এখন জমি থেকে উচ্ছেদের কথা শুনে দিশেহারা পরিবারটি। এমন চিত্র পুরো এলাকা জুড়েই।
স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ আলী মেম্বার বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় জমি জমা হারিয়েছি। এখন সরকার যদি ক্ষতিপূরণ ছাড়া এবং যাচাই বাছাই না করেই উচ্ছেদ করে তাহলে যাবো কোথায়। নতুন ঘরবাড়ি যদি কেউ তুলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমরা চাই সরকার যাচাই বাছাই করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিক। যদি ক্ষতিপূরণ নাই দিতে পারে তাহলে সরকার অন্য কোথাও তাদের প্রকল্প স্থাপন করুক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, কিছু অসাধু লোক অতিরিক্ত বিল নিতে নতুন নতুন ঘর বাড়ি তুলেছে। তবে আমরা চাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে ক্ষতিপূরণ পায় সেই ব্যবস্থা করা হোক। নতুন ঘরবাড়ি ও গাছপালা রোপন করলে সেগুলো উচ্ছেদ করুক, এতে কোন আপত্তি নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আসাদুজ্জামান বলেন, এ প্রকল্পটি এখানে হওয়ার খবরে দালালচক্র সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাটের জন্য শত শত স্থাপনা, বাগান স্থাপন করে। এ স্থাপনাগুলো দিয়ে দালালচক্র পদ্মা সেতুর বিভিন্ন প্রকল্প থেকে টাকাও উত্তোলন করে। আমরা এ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে সাতদিন সময় বেধে দিয়েছিলাম। ১০ দিনের মাথায় এসে মাননীয় চীফ হুইপ স্যার ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারণ শুরু করেছি। অনেকে নিজে থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘নতুন অবৈধ স্থানপা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পুরানো ঘরবাড়ি ও গাছপালা উচ্ছেদ করা হবে না। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। তিনি আরো বলেন, যেসব গাছ আগে রোপন করা, সেগুলো তো আমরা উচ্ছেদ করবো না। কিন্তু যেগুলো একদম নতুন রোপন করা হয়েছে সেগুলোর বিল কোনভাবেই দেওয়া হবে না।