|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ||
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ১৮ জনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্থানীয় একটি প্রতারকচক্র। এই চক্রের সদস্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের সহকারী মেকানিক ইয়াকুব আলী, ষ্টোর কিপার মমিনুল ইসলাম, এবং কম্পান্ডার ফেরদৌস মিয়া ।
বছর পার হয়ে গেলেও চাকরিতো হয়ইনি। বরং টাকা ফেরৎ দেয়া নিয়েও টালবাহানা করছে এই চক্র। ধার ও জমিজমা বিক্রি করে চাকরির জন্য টাকা দিয়ে এখন ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় অনেকেই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
প্রতারক চক্র প্রথম দিকে চাকরি প্রত্যাশিদের কথা শুনলেও সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে ততই তারা আর কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। উল্টো নানা রকম ভয় ভীতি দেখাতে শুরু করেছে।
এই নিয়োগপ্রতারণা নিয়ে অভিযোগ ওঠায় ইতোমধ্যে নিয়োগ কমিটি থেকে দুজনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দুদক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পৃথক দুটি কমিটি তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় নিয়োগ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের ষ্টোর কিপার মমিনুল ইসলাম , সহকারী মেকানিক ইয়াকুব আলী এবং কম্পান্ডার ফেরদৌস মিয়া দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে রেখেছে। ডাক্তার নার্স অফিস ষ্টাফ সকলেই এই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী ও নার্সদের নিয়োগ, বদলী পদায়ন এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করে।
২০২০সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কার্ডিওগ্রাফার, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ও ইকো টেকনোলজিস্টসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের বিপরীতে প্রতারক চক্রটি ১৮ জনের কাছে জনপ্রতি ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে। যারা চাকরির জন্য টাকা দিয়েছেন তাদের মধ্যে যাদের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে তারা হলেন, জাহিদুল ইসলাম টেকনোলজিষ্ট ল্যাব পদে, হাসপাতালের কাডিওগ্রাফার সেলিনার ছেলে আল-আমিন ট্যাকনিশিয়ান (ইকো) পদে ,পাঁচগাছীর সোহাগ, ভোকেশনাল মোড়ের মো. জামান এবং যতীনের হাটের মসফিকুর রহমান সবুজ। ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর/২০২০ ঢাকায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। টাকা প্রদানকারীগন সাদা খাতা জমা দেয়। ঐ রাতেই সিন্ডিকেট চক্রটি জমা দেয়া খাতা একটি হোটেলে এনে উত্তরপত্র লেখার ব্যবস্থা করে। ১৮ জনই পরীক্ষায় ৭৪ থেকে ৮০ নম্বর অর্জন করে। বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে দুদক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত পৃথক দুটি কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পায়। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ঝুলে যায়। যে সকল অভিজ্ঞতার সনদ দেয়া হয়েছে সেগুলোও বানোয়াট এবং জাল।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ইয়াকুবের মুল পোষ্টিং নাগেশ্বরী হাসপাতালে হলেও দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ধরে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে প্রেষণে কর্মরত আছেন। কম্পান্ডার ফেরদৌসের বাড়ী বগুড়া হলেও এখানে সে দীর্ঘদিন থেকে রাজার হালে আছে। ষ্টোর কিপার মমিনুল মাত্র ছয় বছরের চাকরি জীবনে সকল সিনিয়রকে ডিঙিয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়ে কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
এদের ধন সম্পদ ব্যাংক একাউন্ট কল্পনাকেও হার মানায়। সদর হাসপাতালের কাডিওগ্রাফার সেলিনা বেগমের ছেলে আল-আমিন টেকনিশিয়ান(ইকো) পদে চাকরির জন্য ইয়াকুবকে ১৮ লাখ টাকা দিয়েছেন। তাদের ভোটার আইডি কার্ডে দেখা যায় মা ও ছেলে আল আমিনের বয়সের পার্থক্য মাত্র ৮ বছর। সেলিনা বেগমের আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ ২১.১১.১৯৮৮ আইডি কার্ড নম্বর ১০২০৯৫৪৪৫৭। আইডি কার্ড অনুযায়ী মাত্র ৭ বছর বয়সে সেলিনা বেগম গর্ভধারণ করেছেন। এই আইডিকার্ড জালিয়াতির পেছনেও সিন্ডিকেট চক্র জড়িত।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই চক্রটি এতই বেপরোয়া যে তারা দীর্ঘদিন থেকে প্রকাশ্যেই সব রকম দুর্নীতি করে আসলেও কেউ কিছু বলবার সাহস করে না।
এ ব্যাপারে কাডিওগ্রফার সেলিনা বেগম, সহকারী মেকানিক ইয়াকুব, কম্পাউন্ডার ফেরদৌস আলী, হযরত আলী ও চাকরিপ্রার্থী মুশফিকুর রহমান সবুজের সাথে কথা হলে তারা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
কুড়িগ্রাম হাসপালের তত্বাবধায়ক ডা. লিংকন এ প্রসঙ্গে জানান, ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগের সময় তিনি এখানে কর্মরত ছিলেন না। তাই এ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হাসান ইমামের সাথে যোগাযোগ করে মোবাইলে তাকে পাওয়া যায়নি।