তিন বছরের চুক্তিতে ঠিকাদার দুই বছরে কাজ করেছেন মাত্র ১৫ ভাগ
|| সারাবেলা প্রতিনিধি, গাজীপুর ||
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পল্লী সড়কের গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রানীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে সেতু নির্মাণ শুরু করে ২০১৯ সালের ২২মে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ৩৬ লাখ উনসত্তর হাজার সাতশত ছত্রিশ টাকা। সেতু নির্মাণের নির্ধারিত তিন বছর সময়ের দুই বছর শেষে কাজ হয়েছে মাত্র ১৫ ভাগ।
কাপাসিয়া উপজেলার উত্তর-পূর্ব এলাকা সনমানিয়া ও ঘাগুটিয়া ইউনিয়ন এবং নরসিংদী জেলার মনোহরদী ও শিবপুর উপজেলার মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। নির্মাণকারী সংস্থা নাভানা কনস্ট্রাকশন প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত তিন কোটি তেইশ লাখ উনসত্তর হাজার সাতশত ছত্রিশ টাকায় কার্যাদেশ পায়।
গত রোববার ৩০শে মে সরেজমিন সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ। প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদারের লোকজন অলস সময় কাটাচ্ছে। মূল সেতুর কাজ এখনো শুরু হয়নি। পশ্চিম পাড়ে কয়েকটি পাইল স্থাপনের পর নির্মাণ যন্ত্রগুলো গুটিয়ে রাখা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় থাকা সহকারী ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, মালিক পক্ষ কাজ বন্ধ রেখেছে। টাকার অভাবে মালামাল সরবরাহ দিতে পারছেনা তাই কাজ বন্ধ।
৫৮৪ মিটার দৈর্ঘ্য এই ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিমূল্য ৬৮ কোটি ৩৬ লাখ উনসত্তর হাজার সাতশত ছত্রিশ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২২শে মে ২০২২। নির্মাণাকারী প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ১৫ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের মধ্যে ঠিকাদারের বিল পরিশোধে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে বেশ কয়েকজন সাব কন্ট্রাকটার এখান থেকে চলে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই এলাকায় সেতুর কাজ শেষ হলে মানুষ সহজে নদী পার হতে পারবে। এখন তাঁদের পার হতে হয় নৌকায়। আবার নৌকায় অনেক সময় মাঝি থাকেন না। সেতু নির্মাণকাজে ধীরগতিতে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তাদের দাবি সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করা হোক।
সেতু নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা কাপাসিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান মুহিম জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত মোট কাজের ১৫ শতাংশের বেশি কাজ করতে পারে নি। এমনকি তারা মূল ব্রিজের পাইলিং এর কাজেও হাত দেয়নি। ৮ টি ভায়াডাক্ট স্প্যানের পাইলিং এর ব্যাসও তারা শেষ করতে পারেনি। পাশাপাশি তারা কয়েকটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করেছে। অথচ সারাদেশে একই সময়ে এ জাতীয় অন্যান্য যে সকল ব্রিজের টেন্ডার হয়েছিল বর্তমানে সেগুলোর ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। আমরা তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়েও তাদের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে গুণগত মান ঠিক রেখে কাজ করাতে পারছি না। ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ বন্ধ রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্রিজ প্রকল্পের ম্যানেজার হুমায়ুন কবির জানান, করোনা-১৯ মহামারি জনিত সংকটের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ বন্ধ রয়েছে, দ্রুত কাজ শুরু করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে।
এ বিষয়ে এলজিইডি গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল বারেক জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট লোকজনের সাথে কথা বলে জেনেছেন আর্থিক সংকটের কারণে সেতুর নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। তাই তাদের সাথে চুক্তি বাতিল ও জামানত বাজেয়াপ্তের অনুমতি চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন। অনুমতি পেলে নতুন করে টেন্ডার দেওয়া হবে।