|| সারাবেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট ||
‘আগুন নিভে গেছে’ বলে ঘোষনা দেওয়ার পর এক রাতের ব্যবধানে আবারও সুন্দরবনে আগুন জ্বলছে। বুধবার ৫ই মে সকালে দাসের ভারানী এলাকার বনভূমিতে আগুন জ্বলতে দেখে ফের বনবিভাগ, সিপিজি সদস্য ও স্থানীয় গ্রামবাসী আগুন নেভাতে কাজ শুরু করেছে।
এরআগে গত সোমবার সকালে একই স্থানে লাগা আগুন মঙ্গলবার বিকেলে ‘নিভে গেছে’ দাবী করে আগুন নেভানোর কাজ শেষ ঘোষনা করেছিল ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। এতে ৫ একর বনভূমি পুড়ে যায়। এরপর বুধবার সকালে একই এলাকার দক্ষিণ দিকে আবারও আগুন জ্বলতে শুরু করে।
স্থানীয়রা জানান, বনের ব্যাপক জায়গাজুড়ে আগুন জ্বলছে। বাতাসে আগুনের তীব্রতা বাড়ছে। আগুনে বনের শুকনো গাছসহ লতা পাতা গুল্ম পুড়ে যাচ্ছে। ধোয়ায় ব্যাপক জায়গা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। আগুন যেনো চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে ফায়ার লাইন কাটা হচ্ছে। মরা ভোলা নদী থেকে আগুন লাগার স্থানের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটারের বেশী। যে কারণে পানি পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কেননা এখানে অন্য কোনো পানির উৎস নেই।
বনবিভাগের সহয়তাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিপিজি টিম লিডার লুৎফর রহমান জানান, বনের ২৪ নম্বর কম্পার্টমেন্টের বিশাল জায়গাজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বাতাসের তীব্রতায় আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে বনবিভাগ, গ্রামবাসী ও সিপিজি সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রনে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
নাংলী টহল ফাঁড়ি এলাকার সিপিজি সদস্য মো. ফিরোজ ও সগির হোসেন বলেন, আগুনের খবর পেয়ে আমরা বনবিভাগের সঙ্গে এসে গাছের ডাল কেটে, ফায়ার সার্ভিসের মালপত্র বহন করে এবং ফায়ার বেজ কেটে আগুন নেভাতে সহযোগিতা করছি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাগেরহাটের উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ার বলেন, সবার প্রচেষ্টায় দাসের ভারানি এলাকায় আগুন আমরা নেভাতে সক্ষম হয়েছি। দৃশ্যত আগুন ছিল না, তখন অভিযান শেষ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ওই এলাকায় শুকনো পাতার স্তূপ রয়েছে। এখন যদি আগুন দেখা যায়, সেক্ষেত্রে বনবিভাগ আমাদের জানালে, আমরা আবার পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
এরআগে গত সোমবার সকালে সেখানে আগুন লাগার কারন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলে সিএফ মইনুদ্দিন খান জানান।
এদিকে, একের পর এক সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। তাঁরা কথিত তদন্ত কমিটি গঠন নিয়েও হতাশ। তাঁরা বলছেন, ‘আগে প্রায় ৩০ বার সুন্দরবনে আগুন লেগে কমপক্ষে ৭০ একর বনভুমি পুড়েছে। প্রতিবারই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেসব কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি। শাস্তি হয়নি কোন অপরাধীর।’