|| সারাবেলা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম ||
বন্যাপ্রবণ কুড়িগ্রামের নদ-নদী তীরবর্তী মানুষ প্রতিবছর বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্ততি নিয়ে থাকেন। কিন্তু এবারে মহামারী করোনা আর লকডাউনের কারণে শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। কাজ নেই, জমানো অর্থও শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারছে না তারা। নিজেদেরকে সপে দিয়েছে ভাগ্যের উপর। অপরদিকে জেলা প্রশাসন বলছে বন্যা মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৬টি নদ-নদীর জেলা কুড়িগ্রামে রয়েছে ৩১৬ কিলোমিটার নদীপথ। প্রতি বছর ভারী বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পানির কারণে উপচে ওঠে নদ-নদী। দেখা দেয় বন্যা। দুর্ভোগে পড়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষ।
শুধ বন্যাই নয়, এর সঙ্গে রয়েছ আগ্রাসী নদী ভাঙন। ফলে নদ-নদী তীরবর্তী মানুষের দুর্দশা যেন সারা জীবনের। প্রতিবছর বন্যারিআগে লোকজন আগাম প্রস্ততি হিসেবে ঘরবাড়ী মজবুত করেন। আলগা চুলা, ওষুধপত্র, শুকনো খাবার ও জ্বালানী সংগ্রহ করে রাখেন। রাখেন পর্যাপ্ত চাল-ডাল ও শুকনো খাবার।
কিন্তু এবার অতিমারী করোনা আর লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষকে ঘরেবন্দি থাকতে হচ্ছে। কাজ না থাকায় উপার্জনও কমে গেছে। এরফলে হাতে টাকা-পয়সা না থাকায় আগাম প্রস্তুতির কাজে হাত দিতে পারছেন না তারা। অপেক্ষা করছেন বন্যা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের শেখ পালানু গ্রামের আবুল হোসেন, আশরাফ আলী ও মমেনা বেগম এ প্রসঙ্গে জানান, লকডাউনের কারণে ঢাকায় কাজ করতে যেতে পারি নাই। যা টাকা নিয়ে আসা হয়েছিল, তাই দিয়ে কোনমতে সংসার চলছে। ঘরবাড়ী মেরামত করাতে গেলে না খেয়ে থাকতে হবে।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরফারাজী পাড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আশরাফুল, আবুল হোসেন, বক্কর ও মজিবর জানান, আমরা করোনা, নদী ভাঙন আর লকডাউনের কারণে খুব খারাপ অবস্থায় আছি। গত বন্যায় বাড়ীঘর দুর্বল হয়ে গেছে। বেড়াগুলা ঠিক করা দরকার কিন্তু টাকা খরচ করতে ভয় হচ্ছে। যদি লকডাউন শেষ না হয়, তাহলে আমাদেরকে ভীষণ বিপদের মধ্যে পড়তে হবে।
এই ইউনিয়নের মেম্বার রিপন মিয়া জানান, এবার অনেকের ডিঙি নৌকা শুকনো জায়গায় পরে আছে। মেরামত করার অর্থ নেই। ফলে বন্যায় পারাপারে খুব সমস্যা হবে।
বেসরকারি এনজিও কর্মী আব্দুল মালেক জানান, লোকজন আগাম প্রস্ততি নেয়ার এবার কোন সুযোগই পাচ্ছেন না। কারণ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা লকডাউন আর করোনার কারণে বেসরকারি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম থমকে গেছে। এই সময়টিতে তারা চরাঞ্চলের মানুষদের সচেতনতামূলক নানান কার্যক্রম হাতে নেয়। বর্তমানে সব ধরণের কার্যাদি বন্ধ থাকায় এসব বন্যা কবলিত মানুষের জন্য কোন সহযোগিতা পৌঁছাচ্ছে না।
সার্বিক বন্যার প্রস্তুতি নিয়ে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন জানান, করোনা ও লকডাউনের কারণে মানুষ ইনকাম করতে না পেরে আগাম জিনিসপত্র কিনে রাখা, ঘরবাড়ী ঠিক করা, কিছু অর্থ স য়ে রাখতে পারেনি। ফলে বন্যা মোকাবেলা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে উত্তরের এই জনপদে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিক নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সরকারি সহায়তা পৌঁছে দেয়া শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্দ রেজাউল করিম জানান, বন্যা মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও বন্যা কবলিতদের জন্য পর্যাপ্ত চাল, নগদ অর্থ উপজেলা পর্যায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফলে এর প্রভাব তেমনটা পরবে না।