|| সারাবেলা প্রতিবেদন, ঢাকা ||
রাষ্ট্রচিন্তা, ভাসানী অনুসারি পরিষদ, ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদ, আর গণসংহতি আন্দোলন-এই চার সংগঠন মিলে উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই চার সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। আগামী পয়লা মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সমাবেশ করা হবে ১২ই মার্চ। আলাদাভাবে পালন করা হবে স্বাধীনতা দিবস এবং স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিবস পালন করা হবে ১০ই এপ্রিল।
সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত না থাকলেও উপস্থিত ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। এছাড়া ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকির সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য হাসনাত কাইয়ুম।
রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতিতে এই চার সংগঠনের একমঞ্চের রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পর্কে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম এখানে নঈম জাহাঙ্গীর ভাই-বাবলু ভাইরা রয়েছে, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রজন্ম সাকি ভাইরা রয়েছে, আমরা এই প্রজন্মের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিকরা রয়েছি- তিন প্রজন্ম মিলে এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।” তিনি বলেন, “আমরা আজকের এই সমাবেশ থেকে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায়, ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়ায় যে যেখান থেকে আমাদের এই বক্তব্য শুনবেন আমরা আপনাদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানাই। কোনো দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য না, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষায় বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করার জন্য।”
রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বলেন, বাংলাদেশে সবার জন্য আইনের সমান প্রয়োগ, শাসক গোষ্ঠীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই তারা চার সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রাথমিকভাবে এক জায়গায় এসেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এর বিকল্প নেই।
নিজেদের দাবি তুলে ধরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। পারস্পরিক বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি বর্জন করে সকলের সাথে আইনানুগ ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেওয়াও হবে অন্তর্বর্তী সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
তিনি বলেন, “সকলের অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তির বাংলাদেশ, বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের বাংলাদেশ, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের বাংলাদেশ কায়েমের প্রথম শর্তই হচ্ছে, সকলের জন্য ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করা। কেবলমাত্র জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই ক্ষমতা পরিবর্তনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে চার সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে ভাসানী অনুসারী পরিষদের নেতা নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যার ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে সেটাই হল আমাদের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলানোর নিক্তি বা মানদণ্ড। আগামীর বাংলাদেশকে এই ঘোষণার ভিত্তিতেই আমরা গঠন করতে চাই।”
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অঙ্গীকার সাম্য, মানিবক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এর নীতিতে একটি মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের কাজে ভূমিকা রাখার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সংবিধান সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র রূপান্তরে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, “মুক্তিযুদ্ধকে লুটেরা পাচারকারী, মাফিয়া ও স্বৈরাতান্ত্রিক শাসনের কাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে আজ ইতিহাসকে একদলীয় কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। আমরা জনযুদ্ধের ইতিহাসকে মুক্ত করতে চাই। তাকে জনগণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠারর প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করতে চাই। এই লক্ষ্যে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আগামী ১লা মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোসহ সারা দেশে আমরা চার সংগঠনের সভা-সমাবেশ-মিটিং-মিছিলসহ বিভিন্নভাবে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব। আমাদের বক্তব্যের পক্ষে জনগণকে সংগঠিত করব, প্রয়োজনে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলব।”